-->

অহেতুক চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখবেন যেভাবে।

চিন্তা

  প্রতি মুহূর্তে হাজার হাজার চিন্তার স্রোত আমাদের মনের মধ্যে যাতায়াত করতে থাকে কিন্তু কোনোটিই পূর্ববর্তীর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা নয়। কেন না এগুলো হচ্ছে শুধুই চিন্তা। এছাড়া চিন্তার নিজস্ব কোন অর্থ নেই।  অর্থাৎ তারা চার্জ নিরপেক্ষ। আমরা ঐসব চিন্তার উপর অর্থ আরোপ করি, ভালো অর্থ বা মন্দ অর্থ। ভালো অর্থ আরোপিত হলে ইতিবাচক চিন্তা আবার মন্দ অর্থ আরোপিত হলে নেতিবাচক চিন্তা। শর্তাধীন নেতিবাচক মন হলে অভ্যাসগতভাবে আমরা সব কিছুকে খারাপ অর্থে, মন্দ অর্থে, ক্ষতিকর বা বিপর্যয়কর অর্থে গ্রহণ করি। তখন ঐ চিন্তাগুলো রূপান্তরিত হয়ে নেতিবাচক অর্থ গ্রহণ করে আমাদের  মনে ও মস্তিষ্কে ঘন ঘন আঘাত করে থাকে। যেহেতু এই নেতিবাচক চিন্তা গুলো নেতিবাচক ভাবে শক্তি যুক্ত হয়ে পড়েছে তাই যত বেশি বার এরা মনে হানা দেবে, মন ততবেশি নেতিবাচক অনুভুতিতে ভরে উঠতে থাকবে। যেমন: হতাশা, বিষন্নতা, হীনতা, উদ্বেগ, ভয়, অপমান, ক্রোধ, হিংসা যাই বলি না কেন। কিন্তু সেই চিন্তা গুলো যদি পজিটিভলি চার্জ যুক্ত হত অর্থাৎ এর মূল্যায়ন ব্যাখ্যা যদি ইতিবাচক হত তাহলে মন ভরে উঠত ইতিবাচক অনুভূতিতে। আনন্দ, সুখ, গৌরব, সম্মান, সফলতা ইত্যাদি বোধ দিয়ে। 

চিন্তাপরাধ

চিন্তা
Image by Author
এ থেকে আমরা জানতে পারলাম, চিন্তার নিজস্ব কোন শক্তি নেই; সেগুলো নিরপেক্ষ। আমাদের শর্তাধীন মনের উপর ইতিবাচক বা নেতিবাচক শক্তি বসিয়ে দেয়। তাই চিন্তা ও আমরা এক নই। আমরা চিন্তার স্রোতে গা ভাসিয়ে দেই বলে বুঝতে পারিনা, চিন্তা স্বতন্ত্রভাবে মনে আসে ও যায়। আমরা নিজেকে এ থেকে বিচ্ছিন্ন বা বিযুক্ত থেকে একে অবলোকন করতে পারি। কি ধরনের চিন্তা, ছবি বা আবেগ মনে আসছে বা যাচ্ছে তা আমরা একটু চেষ্টা করলেই নিরীক্ষণ করতে পারি। আমরা যেমন পায়ের কোথাও ব্যাথা হলে সেদিকে না তাকিয়ে বলতে পারি কোথায় ব্যথা, কতটুকু ব্যথা তেমনি আমাদের মনে কোন ধরনের চিন্তা যাতায়াত করে ও করছে তাও লক্ষ্য করতে পারি। এবং সে চিন্তার ধরন ও প্রকৃতি সম্পর্কেও বলতে পারি। চিন্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চিন্তাকে অবলোকন করতে পারা এটি এক চমৎকার অভিজ্ঞতা। আপনি নিজেই টা করে দেখতে পারেন। 

চিন্তা দূর করার উপায়

চিন্তার মন্দ আঘাত থেকে বাঁচতে হলে নিজেকে এ থেকে স্বতন্ত্র রাখতে হবে।

স্বল্প একটি নেতিবাচক চিন্তাও মনে মধ্যে ঘুরপাক খেতে খেতে ঐ খান থেকে শক্তি নিয়ে আকারে ও বলে বৃদ্ধি পেয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। আপনি যেকোন চিন্তাকে দুই ভাবে গ্রহণ করতে পারেন- ' আমার চিন্তা আমার উন্নতির কারণ' অথবা ' আমার চিন্তা শুধু চিন্তা'। এ দুটি চিন্তার মধ্যে যে চিন্তায় মনের মধ্যে আসুক না কেন একে কেবলমাত্র চিন্তা মনে করুন। ধরুন মন যদি ভালো না থাকে, চিন্তা হতে পারে; আমি কখনোই উন্নতি লাভ করতে পারবো না। এই চিন্তা কখনোই বাস্তবতার প্রতিফলন নয়, বরং এটি নেতিবাচক অনুভূতির ফলশ্রুতিতে মনের মধ্যে আসতে থাকে । আপনি একে সত্য বলে বিশ্বাস না করে, বরং এটা ভাবতে পারেন যে, আপনার মনে আবার সেই ক্ষতিকারক চিন্তা ঢুকে পড়েছে। দেখি এভাবে কতবার এই চিন্তাগুলো মাথার মধ্যে আসে ও কত সময় পর্যন্ত থাকে। চিন্তা নিয়ে কখনো এ ভাবে ভেবে দেখেছেন? চিন্তা যেমন আমাদেরকে সুখী করতে পারে। ঠিক তেমনিভাবে, সে একই চিন্তা আমাদের পরিস্থিতির নির্মম অসহায়ত্বের কারণও হতে পারে, আমাদেরকে হতাশ, হীনমন্য, বিষন্ন ও অসুখী করে ছাড়তে পারে।  

অহেতুক চিন্তা দূর করার উপায়
Image by Author

অহেতুক চিন্তা দূর করার উপায়

আমরা টিভিতে ভয়ঙ্কর ছবি দেখি, বেদনাদায়ক নাটক দেখি এবং এসব কিছু দেখার পর স্বাভাবিক ভাবেই খাবার খেতে চলে যায়। তবে কারও কারও মনে ঐ কাল্পনিক ঘটনা গুলো বাস্তবের মতন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, যা তারা অনেকক্ষণ ধরে মন থেকে তাড়াতে পারে না। যদিও এসব ঘটনা তাদের জীবনে কখনো ঘটেনি। তবু ঐ সব বাস্তব সত্যের মতন তাদের মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। তবে বেশিরভাগই অতিরিক্ত কোন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া না করে স্বাভাবিক থাকেন।আমাদের মনের টিভিতেও তেমনি অনেক ঘটনা ঘটে, অনেক অপ্রয়োজনীয়, চিন্তা মনে আসতে পারে। আমাদেরকে সেগুলোকেও নিজেদের থেকে আলাদা করে দেখতে হবে। টিভির নাটকে দেখার পর যে কষ্ট সেটা যেমন বাইরের ঘটনা মনে করে মুহূর্তে স্বাভাবিক মনে ফিরে আসেন। মনের টিভির এসব সরবরাহকৃত ক্ষতিকর চিন্তা গুলোকেও অপ্রয়োজনীয় বিবেচনা করে বাতিলের খাতায় পাঠিয়ে দিন। এসব চিন্তাকে মনে কেবল আসতে ও যেতে দিন। এদের ভিতরে না থেকে নিজেকে এদের থেকে একটু সরিয়ে নিয়ে এসব জটিল ও পেঁচানো চিন্তাগুলোকে লক্ষ্য করুন। কি ধরনের চিন্তা ও কতবার মনে হানা দিচ্ছে তা গুনতে থাকুন। তীব্র নেতিবাচক চিন্তা গুলো মিসাইলের গতিতে সেকেন্ডে শত সহস্রবার মনে আঘাত করতে পারে। যতবারই তা মনে হানা দেবে ততবার আঙ্গুলদিয়ে গুনতে থাকুন। একসময় দেখবেন চিন্তার বৃষ্টির ধারা কমে আসছে। সংখ্যায় যেমন কমবে তেমনি তার শক্তিও কমে আসবে। এখানে শক্তি মানে নেতিবাচক শক্তি ও নেতিবাচক অনুভূতি। এই অবলোকন এমন হবে যেন চোখ বুজে আপনি দেখতে আছেন যে চিন্তাস্রোত ট্রেনের মতন স্টেশনে আসছে ও চলে যাচ্ছে। কিন্তু আপনি নিজে সেই ট্রেনে যাত্রী নন। আপনি শুধুমাত্র পর্যবেক্ষক। শুধু দেখছেন ট্রেনটি, কিভাবে কতবার আসছে ও যাচ্ছে।

নেতিবাচক চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়
Image by Author

নেতিবাচক চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়

চিন্তাকে এভাবে দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারলে, তাকে শুধু বয়ে যেতে দিলে, তাকে গণনা করতে পারলে দেখবেন চিন্তা ও আপনি সত্যি সত্যি আলাদা জিনিস। আমরা ট্রেনের যাত্রী তার মানে এটা নয় যে আমরা ও ট্রেন এক। তেমনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা চিন্তা ট্রেনের যাত্রী হয়ে থাকি বলে, নিজেদেরকে আলাদা ভাবতে পারিনা। এখন থেকে অভ্যাস করুন সব ধরনের চিন্তা ট্রেনের যাত্রী না হতে। দূর থেকে দেখুন সেটি কোন ট্রেন, কোন ধরনের, তার গন্তব্য কোথায়। আপনার গন্তব্য যদি হয় শান্তির পথে, সুখ ও সমৃদ্ধির পথে তাহলে আপনি ভুল করে অশান্তির ট্রেনে, ব্যর্থতা ও গ্লানির ট্রেনে জোর করে বসে থাকবেন না। বাছাই করার সুযোগ যেখানে রয়েছে সেখানে নিশ্চয়ই আপনি ভুল গন্তব্যের ট্রেনে চেপে বসবেন না। কোন ' চিন্তা ট্রেন' এ চড়বেন তা বেছে নেওয়ার অধিকার এবং সুযোগ দুইটাই আপনার রয়েছে; এবার শুধু বেছে নিন সঠিক চিন্তা ট্রেনটিকে।


নেতিবাচক চিন্তা দূর করার উপায়

'চিন্তা ট্রেন' বেছে নেবেন যেভাবে: আমরা ও আমাদের চিন্তা খুবই কাছাকাছি। তাই এতে বিচ্ছিন্ন হওয়া কিছুটা কঠিন ও প্রচেষ্টা সাপেক্ষ। কখন বুঝবেন মনে নেতিবাচক চিন্তা ট্রেন অবাধে প্রবেশ করছে? যখনই মন অস্থির থাকবে, অশান্ত থাকবে, অর্থাৎ মন খারাপ থাকবে, তখনই মনে করবেন কোনো না কোনো নেতিবাচক স্মৃতি, চিন্তা, মনের ভিতর অবাধে প্রবেশ করছে। মন খারাপের সময়, উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার সময় কয়েক মিনিট একান্তে নিরিবিলি রুমের সব কাজ বন্ধ করে এবং চোখ বন্ধ করে মনের দিকে নজর দিন। চিন্তার স্রোত আপনাকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চাইবে। আপনি এখন থেকে সময় নিয়ে একটি কাজ করবেন, সেটি হচ্ছে নিজেকে চিন্তা থেকে একটু সরিয়ে নিয়ে তাদের আসা-যাওয়ার দিকে নজর দিবেন।  এরপর ভালো করে যত্নসহকারে চিন্তাগুলোকে লক্ষ্য করুন। মনে শুধু যে চিন্তা আসে তা নয়; বরং এর সাথে যুক্ত হয়ে আসে ছবি ও অনুভূতি। যেহেতু মনের মধ্যে নেতিবাচক চিন্তা আসতে শুরু করেছে, সেহেতু স্বাভাবিকভাবে মনের অনুভূতিও থাকবে নেতিবাচক প্রকৃতির যেমন বিষন্ন, হতাশ, এবং উদ্বেগ, অস্থিরতা যুক্ত। ভালোভাবে মনের দিকে নজর দিলে চিন্তা, মন ছবি ও অনুভূতি তিনটিই পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। কি ধরনের চিন্তা মনে আসে এবং কতবার আসে তা গণনা করা। মনের অনুভূতি যতক্ষণ খারাপ থাকে তা গুণতে পারেন। এই সময় চিন্তা বা অনুভূতি নিয়ে অন্য কিছু করার কথা আপাতত আমি বলতেছি না। শুধুমাত্র নিজেকে একটু টাইম দিয়ে গুণতে বলেছি। যতক্ষণ না তাদের আনাগোনার তীব্রতা না কমছে ততক্ষণ পর্যন্ত গুণতে থাকুন। তীব্র আবেগের সময় এটি কঠিন হতে পারে। তীব্র চিন্তাস্রোত থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করা প্রথম প্রথম দুরূহ মনে হতে পারে। তবে ক্রমশ আপনি দক্ষ হয়ে যাবেন। একবার এটিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে হলো এটি একটি উপভোগ্য মজার খেলা হয়ে দাঁড়াবে।  

নেতিবাচক চিন্তা দূর করার উপায়
Image by Author

চিন্তা, কল্পনা, ও স্বপ্নের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে মিল থাকেন। এগুলোর মধ্যে অবাস্তবতা, অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর দিক অবশ্যই থাকে। কল্পনা ও স্বপ্নকে সত্য বলে মনে না আনলে চিন্তার সব অংশকেই সত্য বা বাস্তব ভাবার তেমন কোনো যুক্তি নেই। যে মন কল্পনা করে স্বপ্ন দেখে, মনে রাখবেন সেই মনই চিন্তা সৃষ্টি করে। তাই মনের কুহকে না পড়ে আজ থেকেই প্রকৃত সত্য ও বাস্তবতা থেকে দূষিত সব চিন্তাকে পার্থক্য করা শিখতে হবে। দূর থেকে সঠিক গন্তব্যের চিন্তা ট্রেনটিকে শুধু বেছে নেবেন এর উপর চড়ে বসার জন্য। অন্য আর সব নেতিবাচক চিন্তা ট্রেনগুলোকে স্টেশনে শুধু আসা যাওয়া করতে দিন। এর যাত্রী অন্যকে হতে চাইবে জানিনা তবে আপনি আমি অবশ্যই নয়।

আরো কিছু আর্টিকেল পড়ুন:


Post a Comment

0 Comments